কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী ফিকাহ প্রথম পর্ব - তাওহীদ ও ঈমান মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত্তুওয়াইজিরী ১ টি

রসূলগণ যে তাওহীদের প্রতি দা'ওয়াত করেছেন এবং যার জন্য আসমানী কিতাবসমূহ নাজিল হয়েছে তা দু’প্রকার।

প্রথম: জ্ঞান ও সুসাব্যস্ত করার তাওহীদ। এটাকে ‘‘তাওহীদুর রবূবিয়্যাহ ও তাওহীদুল আসমা ওয়াস্সিফাত’’ বলা হয়। এ হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদ তাঁর সমস্ত নামে ও গুণাবলিতে এবং কার্যাদিতে।

এর অর্থ: বান্দা দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে এবং স্বীকার করবে যে, আল্লাহ একক। তিনিই একমাত্র রব তথা প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও এ পৃথিবীর মহাব্যবস্থাপক। তিনি তাঁর যাতে তথা সত্তায়, নামসমূহে ও গুণাবলীতে, কার্যাদিতে পরিপূর্ণ। সবকিছুই তিনি জানেন এবং সবকিছুকে ব্যাপৃত করে রেখেছেন। তাঁর হাতে রাজত্ব। তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর ক্ষমতাবান। তাঁর সুন্দরতম নাম, উচ্চ গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

لَیۡسَ کَمِثۡلِهٖ شَیۡءٌ ۚ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ﴿۱۱﴾

‘‘তাঁর সদৃশ কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’’ [সূরা শূরা: ১১]

দ্বিতীয়: ইচ্ছা ও চাওয়ায় তাওহীদ তথা একত্ববাদ। ইহাকে ‘‘তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ ওয়াল-‘ইবাদাহ্’’ বলে। আর তা হলো সকল প্রকার ইবাদতে আল্লাহকে একক সাব্যস্ত করা। যেমন: দোয়া, সালাত, ভয়-ভীতি ও আশা-আকাঙ্খা ইত্যাদি।

এর অর্থ: বান্দা একিন রাখবে এবং স্বীকার করবে যে, আল্লাহ একমাত্র সকল সৃষ্টির ইবাদতের হকদার। অতএব, কোন ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা যাবে না। যেমন: দোয়া, সালাত, সাহায্য চাওয়া, ভরসা করা, ভয়-ভীতি, আশা-আকাংখা করা, জবাই করা ও নজর-মান্নত মানা ইত্যাদি সবই একমাত্র আল্লাহর জন্য আর অন্য কারো জন্য নয়। আর যে ব্যক্তি এগুলোর মধ্যে কোন কিছু অন্যের জন্য করবে সে মুশরিক হয়ে যাবে। যেমন: আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:

 

وَ مَنۡ یَّدۡعُ مَعَ اللّٰهِ اِلٰـهًا اٰخَرَ ۙ لَا بُرۡهَانَ لَهٗ بِهٖ ۙ فَاِنَّمَا حِسَابُهٗ عِنۡدَ رَبِّهٖ ؕ اِنَّهٗ لَا یُفۡلِحُ الۡکٰفِرُوۡنَ ﴿۱۱۷﴾

‘‘যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার কোন সনদ নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয়ই কাফেররা সফলকাম হবে না।’’ [সূরা মু‘মিনূন: ১১৭ ]


তাওহীদকে স্বীকার করার বিধান:

(ক) তাওহীদুর রবুয়িয়া মানুষ তার স্বভাব ও নিখিল বিশ্ব দেখেই স্বীকার করে থাকে। আর শুধুমাত্র এই তাওহীদ স্বীকার করলে আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং আজাব হতে বাঁচার জন্য যথেষ্ট নয়; কারণ ইহা ইবলীস শয়তান ও মুশরেকরাও স্বীকার করেছিল যা তাদের কোন উপকারে আসেনি; কেননা তারা তাওহীদুল উলুহিয়া তথা একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকে মেনে নেইনি।

অতএব, যে শুধুমাত্র তাওহীদুর রবুবিয়াকে স্বীকার করবে সে তাওহীদপন্থী ও মুসলিম বলে বিবেচিত হবে না। আর যতক্ষণ সে তাওহীদুল উলুহিয়াকে না স্বীকার করবে ততক্ষণ তার জানমালের নিরাপত্তাও পাবে না। সে সাক্ষ্য দেবে যে আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই এবং তিনি একক তাঁর কোন শরিক নেই। আরো স্বীকার করবে যে, ইবাদতের হকদার একমাত্র আল্লাহই এবং কোন শরিক ছাড়াই সর্বদা এক আল্লাহরই ইবাদত করবে।

আল্লাহ তা‘য়ালার বাণী:

وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ ؕ﴿۵﴾


‘‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক দ্বীন।’’ [সূরা বাইয়িনাহ:৫]

(খ) তাওহীদুল উলূহিয়াহ ওয়াল ‘ইবাদাহ’’-এর বেশিরভাগ মানুষ কুফরি ও অস্বীকার করেছে। আর এ জন্যই আল্লাহ মানুষের নিকট সমস্ত রসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। তাঁদের উপর আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন, যাতে করে মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্দেশ করেন এবং অন্য সকলের ইবাদত ত্যাগ করতে বলেন।

আল্লাহর বাণী:

وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا نُوۡحِیۡۤ اِلَیۡهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدُوۡنِ ﴿۲۵﴾


‘‘আপনার পূর্বে আমি যে রসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। সুতরাং, আমারই এবাদত কর।’’ [ সূরা আম্বিয়া:২৫]

আরো আল্লাহর বাণী:

وَ لَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ اجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ


‘‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত (আল্লাহ ব্যতীত সকল উপাস্য) থেকে বেঁচে থাক।’’ [সূরা নাহাল: ৩৬]


তাওহীদুর রবূবিয়া ও উলুহিয়ার অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক:

তাওহীদুর রবুবিয়াহ তাওহীদুল উলুহিয়াহকে আবশ্যক করে দেয়। তাই যে ব্যক্তি স্বীকার করে যে, আল্লাহই একমাত্র প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও রিজিকদাতা, তার জন্য এ কথা স্বীকার করা আবশ্যক হয়ে পড়ে যে, ইবাদতের হকদার একমাত্র আল্লাহই আর কেউ নয়। অতএব, সে আল্লাহ তা‘য়ালা ব্যতীত আর কাউকে ডাকবে না, একমাত্র তাঁরই নিকট বিপদ মুক্তি চাইবে, একমাত্র তাঁরই উপর ভরসা করবে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য কোন ইবাদত করবে না। তাওহীদুল উলুহিয়া তাওহীদুর রবুবিয়াকে আবশ্যক করে। সুতরাং, যে কেউ একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে সে তাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরিক করবে না। আর জরুরি ভিত্তিতে এ বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহই একমাত্র তাঁর প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা ও মালিক।

তাওহীদুর রবুবিয়া ও তাওহীদুল উলুহিয়া কখনো এক সঙ্গে উল্লেখ হয় তখন তার অর্থ ভিন্ন হয়। এ সময় রবের অর্থ হবে মালিক-ব্যবস্থাপক আর ইলাহ্ অর্থ হবে সত্য মা‘বূদ যিনি একমাত্র ইবাদতের হকদার। যেমন : আল্লাহর বাণী:

قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ النَّاسِ ۙ﴿۱﴾ مَلِکِ النَّاسِ ۙ﴿۲﴾ اِلٰهِ النَّاسِ ۙ﴿۳﴾

‘‘বলুন! আমি মানুষের প্রতিপালকের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মানুষের অধিপতি। মানুষের মা’বূদ।’’ [ সূরা নাস:১-৩]

আবার কখনো আলাদা আলাদা উল্লেখ হয় তখন উভয়ের অর্থ একই হয়।  যেমন  আল্লাহর বাণী:

قُلۡ اَغَیۡرَ اللّٰهِ اَبۡغِیۡ رَبًّا وَّ هُوَ رَبُّ کُلِّ

‘‘বলুন! আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মা’বূদ তালাশ করব! অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক।’’ [সূরা আন‘আম:১৬৪]


তাওহীদের হকিকত ও নির্যাস:

মানুষ দেখে প্রতিটি জিনিস একমাত্র আল্লাহ তা‘য়ালার পক্ষ থেকে হয়। আর কোন কারণাদি ও মাধ্যমের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে না। সে ভাল-মন্দ এবং লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি শুধু আল্লাহ তা‘য়ালার কাছ থেকেই হয় মনে করে। তাই একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করে এবং তার সাথে আর কারো ইবাদত করে না।


তাওহীদের  হকিকতের ফলাফল:  

একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং কোন সৃষ্টির নিকট অভিযোগ না করা। তাদের তিরস্কার ও নিন্দা না করা। আল্লাহর উপর পূর্ণ সন্তুষ্টি থাকা এবং তাঁকে মহব্বত করা ও তাঁর ফয়সালার প্রতি পূর্ণ আত্মসর্মপণ করা। এ ছাড়া সুন্দরভাবে তাঁর ইবাদত করা, সর্বদা তাঁর আনুগত্য করা, তাঁর প্রতি ভাল ধারনা রাখা এবং তাঁর জিকির দ্বারা প্রশান্তি ভাল করা।

মানুষ তার স্বভাবগতভাবে ও পৃথিবীর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপের মাধ্যমে তাওহীদে রবূবিয়াকে স্বীকার করে থাকে। এ তাওহীদকে স্বীকার করা আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর শাস্তি থেকে নাজাতের জন্য যথেষ্ট নয়; কারণ ইহা ইবলিস শয়তান স্বীকার করেছিল এবং মুশরিকরাও স্বীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এ স্বীকারোক্তি কোন উপকারে আসেনি; কারণ তারা ‘‘তাওহীদুল ‘ইবাদাহ্’’ তথা ইবাদতকে একমাত্র আল্লাহর জন্য স্বীকার করে নাই। সুতরাং, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র তাওহীদুর রবূবিয়াহকে স্বীকার করে সে মুওয়াহ্হিদ তথা তাওহীদপন্থী ও মুসলিম হতে পারে না। তার জীবন ও সম্পদ হারাম ততক্ষণ হয় না যতক্ষণ সে তাওহীদে উলূহিয়াকে স্বীকার করে না নেয়। সে সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মা’বূদ (উপাস্য) নেই। তিনি একক ও তাঁর কোন শরিক নেই। আরো স্বীকার করবে যে, আল্লাহই একমাত্র ইবাদতের হকদার আর কেউ নয়। আর কোন প্রকার শিরক ছাড়াই একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকে নিজের উপর আবশ্যকীয় করে নেবে।


তাওহীদের ফজিলত:

১. আল্লাহর বাণী:

وَ بَشِّرِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ؕ کُلَّمَا رُزِقُوۡا مِنۡهَا مِنۡ ثَمَرَۃٍ رِّزۡقًا ۙ قَالُوۡا هٰذَا الَّذِیۡ رُزِقۡنَا مِنۡ قَبۡلُ ۙ وَ اُتُوۡا بِهٖ مُتَشَابِهًا ؕ وَ لَهُمۡ فِیۡهَاۤ اَزۡوَاجٌ مُّطَهَّرَۃٌ ٭ۙ وَّ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۵﴾

‘‘আর (হে নবী) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্মসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্ত্তত: তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিণী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।’’ [সূরা বাকারা:২৫]   

২. আল্লাহর বাণী:

اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ لَمۡ یَلۡبِسُوۡۤا اِیۡمَانَهُمۡ بِظُلۡمٍ اُولٰٓئِکَ لَهُمُ الۡاَمۡنُ وَ هُمۡ مُّهۡتَدُوۡنَ ﴿۸۲﴾

‘‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানে কোন প্রকার শিরকের সংমিশ্রণ ঘটায়নি তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা এবং তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত।’’ [সূরা আন‘আম: ৮২]

৩.  আল্লাহর বাণী:

اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ تَطۡمَئِنُّ قُلُوۡبُهُمۡ بِذِکۡرِ اللّٰهِ ؕ اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰهِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ ﴿ؕ۲۸﴾


‘‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’’ [সূরা রা‘দ:২৮]

 

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: « مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ، أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنْ الْعَمَلِ ».متفق عليه.


৪.  উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন:‘‘যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মা’বূদ নেই এবং নেই কোন প্রকার তাঁর শরিক।  আর মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রসূল এবং ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও রসূল ও তাঁর বাণী যা রুহ হিসাবে মরয়মের মধ্যে নিক্ষেপ করে ছিলেন। আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নামও সত্য। সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, চাই সে যেই কোন আমল করুক না কেন।’’[1]


عَنْ جَابِرٍ قَال أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْمُوجِبَتَانِ فَقَالَ:« مَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ». أخرجه مسلم.

৫. জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (সা.)-এর নিকট একজন মানুষ এসে বলল: হে আল্লাহর রসূল! ওয়াজিবকারী দু’টি জিনিস কি? তিনি (সা.) বললেন:‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরিক করা ছাড়া মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরিক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’[2]


তাওহীদপন্থীদের প্রতিদান:

আল্লাহর বাণী:

وَ بَشِّرِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ؕ کُلَّمَا رُزِقُوۡا مِنۡهَا مِنۡ ثَمَرَۃٍ رِّزۡقًا ۙ قَالُوۡا هٰذَا الَّذِیۡ رُزِقۡنَا مِنۡ قَبۡلُ ۙ وَ اُتُوۡا بِهٖ مُتَشَابِهًا ؕ وَ لَهُمۡ فِیۡهَاۤ اَزۡوَاجٌ مُّطَهَّرَۃٌ ٭ۙ وَّ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۵﴾


‘‘আর (হে নবী-সা.) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎআমলসমূহ করেছে, তাদেরকে এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসাবে কোন ফলপ্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্ত্তত: তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিণী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।’’ [সূরা বাকারা: ২৫]


عَنْ جَابِرٍ  قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْمُوجِبَتَانِ ؟ فَقَالَ:্র مَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ ،وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ . أخرجه مسلم.


২. জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.)-এর নিকটে একজন মানুষ এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! ওয়াজিবকারী দু’টি জিনিস কি? তিনি (সা.) উত্তরে বললেন:‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরিক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরিক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’[3]


তাওহিদী কলেমার মহত্ব:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو  أنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:্র إِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ نُوحًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا حَضَرَتْهُ الْوَفَاةُ قَالَ لِابْنِهِ:্র إِنِّي قَاصٌّ عَلَيْكَ الْوَصِيَّةَ، آمُرُكَ بِاثْنَتَيْنِ، وَأَنْهَاكَ عَنْ اثْنَتَيْنِ ، آمُرُكَ بِـ "لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ " فَإِنَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعَ وَالْأَرْضِينَ السَّبْعَ لَوْ وُضِعَتْ فِي كِفَّةٍ ، وَوُضِعَتْ "لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ " فِي كِفَّةٍ رَجَحَتْ بِهِنَّ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، وَلَوْ أَنَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعَ وَالْأَرْضِينَ السَّبْعَ ،كُنَّ حَلْقَةً مُبْهَمَةً قَصَمَتْهُنَّ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ فَإِنَّهَا صَلَاةُ كُلِّ شَيْءٍ وَبِهَا يُرْزَقُ الْخَلْقُ، وَأَنْهَاكَ عَنْ الشِّرْكِ وَالْكِبْرِগ্ধ. أخرجه أحمد والبخاري في الأدب المفرد.


আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহর নবী নূহ (আঃ)-এর মৃত্যুকালে তাঁর ছেলেকে বলেন: ‘‘আমি তোমাকে অসিয়ত করছি: দু’টি জিনিসের নির্দেশ করছি এবং অপর দু’টি জিনিস থেকে নিষেধ করছি। আদেশ করছি ‘‘লা ইলাাহা ইল্লাল্লাাহ’’ এর। স্মরণ রাখ! যদি সাত আসমান ও সাত জমিন এক পাল্লায় রাখা হয় আর অপর পাল্লায় রাখা হয় ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ তবে ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাাহ’’ এর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। যদি সাত আসমান ও সাত জমিন একটি অবিচ্ছদ্য গোলাকার বৃত্ত হত তাহলে ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ ও ‘‘সুবহাানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি’’ সবকিছুকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলতো। ইহা প্রতিটি জিনিসের দোয়া এবং এর মাধ্যমেই সৃষ্টিরাজি রুজি পেয়ে থাকে। আর তোমাকে নিষেধ করি শিরক ও অহঙ্কার করা থেকে-----। ’’[4]


তাওহীদের পূর্ণতা:

তাওহীদের পূর্ণতা ততক্ষণ সম্ভব নয় যতক্ষণ পর্যন্ত একমাত্র আল্লাহর ইবাদত ও সর্বপ্রকার তাগুত তথা শিরক মুক্ত না হয়। যেমন আল্লাহর বাণী:

وَ لَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ اجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ

‘‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত তথা শিরক থেকে দূরে থাক।’’ [সূরা নাহ্ল: ৩৬ ]


তাগুতের বর্ণনা:

তাগুত হলো: এমন প্রত্যেক জিনিস যা দ্বারা মানুষ সীমালঙ্খন করে। চাই তা মা‘বূদ (উপাস্য) হোক যেমন: মূর্তি অথবা অনুসরণীয় ব্যক্তি হোক যেমন: জ্যোতিষ-গণক ও ধর্ম ব্যবসায়ী পীর-বুজর্গ এবং বদ আমল আলেম সমাজ অথবা মান্যবর ব্যক্তিরা হোক যেমন: শাসক ও নেতাজি ও প্রধানরা যারা আল্লাহর অবাধ্য।


তাগুতের নেতারা:

তাগুত অনেক আছে তাদের মধ্যে বড় পাঁচটি:

  • ইবলিস: হে আল্লাহ! আমারা তার থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
  • যার ইবাদত করা হয় আর সে তাতে সন্তুষ্ট থাকে।
  • যে মানুষকে নিজের ইবাদতের জন্য ডাকে।
  • যে ব্যক্তি ‘‘গায়বী ইলম’’ তথা কোন মাধ্যম ছাড়াই অদৃশ্যের খবরাদির জ্ঞান দাবি করে।
  • যে আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্যের বিধান (মানব রচিত বিধান) দ্বারা বিচার ফয়সালা করে।

 

اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ؕ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَوۡلِیٰٓـُٔهُمُ الطَّاغُوۡتُ ۙ یُخۡرِجُوۡنَهُمۡ مِّنَ النُّوۡرِ اِلَی الظُّلُمٰتِ ؕ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۵۷﴾

‘‘যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরি করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো জাহান্নামের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।’’ [সূরা বাকারা:২৫৭]

[1]. বুখারী হাঃ নং ৩৪৩৫ ও মুসলিম হাঃ নং ২৮
[2]. মুসলিম হা: নং ৯৩
[3]. মুসলিম হাঃ নং ৯৩
[4]. হাদীসটি সহীহ, আহমাদ হাঃ নং ৬৫৮৩ বুখারীর আদাবুল মুফরাদ হাঃ নং ৫৫৮ সহীহ আদাবুল মুফরাদ হাঃ নং ৪২৬ আলবানীর সিলসিলা সহীহা হাঃ নং ১৩৪ দ্রষ্টব্য।